বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শুধু বাংলাদেশ-ভারত নয়, শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতও লিখেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুনলে অবাক হতে হয় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত ‘আপা শ্রীলঙ্কা, নম নম নম নম মাতা, সুন্দর শ্রী বরনী’রও মূল রচয়িতা ও সুরকার কবিগুরু। রবী ঠাকুরই সম্ভবত বিশ্বে একমাত্র কবি বা লেখক যিনি তিনি তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা। এবার শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত রচনার সেই ঐতিহাসিক ইতিহাস জেনে নেয়া যাক।
১৯৩০ সালের কথা। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে কলা ও সঙ্গীত বিভাগে পড়তে এসেছিলে তৎকালীন ব্রিটিশ লঙ্কা মানে বর্তমান শ্রীলঙ্কা থেকে আনন্দ সমরকুন নামে এক তরুণ। তিনি পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ছাত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কায় রবীন্দ্রচর্চার পথিকৃৎ ছিলেন আনন্দ। সিংহলি ভাষায় তিনি বহু রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুবাদ করেছেন। অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্র সাহিত্য। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনও করতেন।
১৯৩৮ সালে তিনি গুরুদেবের কাছে তার দেশের জন্য একটি গান লিখে দেয়ার অনুরোধ করেন। প্রিয় ছাত্রের এই অনুরোধে তিনি বাংলায় লিখে দিলেন ‘নম নম শ্রীলঙ্কা মাতা’। সুর করে গানটি তুলেও দিলেন আনন্দকে।
১৯৪০ সালের কথা, বিশ্বভারতী থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে কবিগুরুর এই গানটি নিয়ে দেশে ফিরে গেলেন আনন্দ সমরকুন। ১৯৪৬ সালে গানটি সিংহলিভাষায় অনুবাদ করে একটি রেকর্ড বের করলেন শ্রীলঙ্কায়।
তারও দু’বছর পর ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতা পায় ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫০ সালে নতুন দেশের জাতীয় সঙ্গীত ঠিক করার জন্য স্যার এডউইন ওয়াসজারএটনির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। এ সময় আনন্দ তার অনূদিত ‘নম নম শ্রীলঙ্কা মাতা’ গানটি এই কমিটির কাছে দেন। কমিটি ১৯৫১ সালের ২২ নভেম্বর এই গানটিকেই শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। মোট ৪৪ লাইন আর ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড গানটির সময়সীমা। এভাবেই প্রিয় ছাত্রকে লিখে দেওয়া কবিগুরুর মূল গানটির অনুবাদ হয়ে যায় আরও একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত।
সেই সময় এই গানটির তামিল ভাষায় অনুবাদ করেন এম নালাথাম্বি। সিংহলি ও তামিল এই দুই ভাষাতেই গানটি গাওয়া হলেও ২০১০-এর ১২ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপক্ষে সংসদে এক বিশেষ বিল এনে এ গানের তামিল অনুবাদটি গাওয়া নিষিদ্ধ করেন।
প্রকাশিত: ৫ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার