Thursday,   23 January, 2025

আজ বাবা দিবস: বাবার প্রতি ভালোবাসা

Published: 20:29, 19 December 2024

আজ বাবা দিবস: বাবার প্রতি ভালোবাসা

বাবা দিবস

আজ ২০ জুন রোববার বাবা দিবস। বাবার জন্য উৎসর্গ করা একটি দিন। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ববাসী বাবা দিবস পালন করা হয়। বিশ্বের নানা দেশে আজ নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেও অনেকে বাবা দিবস পালন করে।

বাবা-পিতা-আব্বা-ড্যাডি, যা বলেই ডাকি না কেন, এ এক চিরন্তণ নির্ভরতার সম্পর্ক। বাবা-মা স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসেন সন্তানদের। বাবা বটের ছায়ার মত ভরাসা হয়ে থাকেন সন্তানের মাথার ওপর। তিনি শুধু দিয়েই যান-তার কিন্তু কোনো চাহিদা নেই। নেই চাওয়া বা পাওয়া। দু’হাত ভরে তিনি যেন শুধু দিতেই এসেছেন। এই নি:স্বার্থ-হৃদয়বান মানুষটিকে আমরা যেন ভালোবাসার কথা বলতে একটু সংকোচ বোধ করি। অনেকেই বলেন, মাকে যে ভাবে ভালোবাসি বলা যায়, বাবাকে সে ভাবে বলা যায় না।

কিন্তু এ তো ঠিক নয়! আমরা বাবা-মা দুজনকেই সমানভাবে ভালোবাসি। আমাদের জীবনে তাদের অবদান যে সীমাহীন। সন্তান হিসেবে তাদের ঋণ শোধ করার সামর্থ্য আমাদের নেই। আমরা শুধু পারি তাদের ভালোবাসতে।

আর এ ভালোবাসা প্রদর্শন করার জন্যই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজনে পালন করা হয় বাবা দিবস।

বাবা দিবসের সূচনা হয়েছিলো গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটন নামের এক নারীর হাত ধরে, যুক্তরাষ্ট্রে। তিনিই প্রথম দিবসটি পালনের জন্য আবেদন জানান।

ক্লেটনের মাথায় ধারণাটি আসে ১৯০৭ সালে। সে বছর ডিসেম্বরে ভার্জিনিয়ার মোনোংয়া অঞ্চলে ভয়াবহ খনি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান সাড়ে তিনশোর বেশি পুরুষ। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা।  ফলে প্রায় এক হাজার শিশু বাবা হারায়।  এসব শিশুর বেদনা পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টবাসী ক্লেটনকেও পীড়া দেয়।

ক্লেটন স্থানীয় মেথোডিস্ট গির্জার যাজককে খনি বিস্ফোরণে শহীদ বাবাদের সম্মানে ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই (রোববার) বাবা দিবস হিসেবে উত্সর্গ করার অনুরোধ জানান। ৫ জুলাইকে বাবা দিবস করার দাবি জানানোর কারণ, সেদিন ছিলো ক্লেটনের বাবার জন্মদিন। তবে তার বাবা বেঁচে ছিলেন না।

১৯০৮ সালে রাষ্ট্রপক্ষ একটি ঐতিহাসিক ফলক স্থাপনের মাধ্যমে ফেয়ারমন্টকে বাবা দিবসের জন্মস্থান হিসেবে ঘোষণা করে। ওই সময় থেকে প্রতি বাবা দিবসে গির্জায় দিনটির মাহাত্ম বর্ণনা করা হতো।

বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে ভূমিকা রেখেছেন আরও এক নারী। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস পালিত হতো না। তখন স্থানীয় গির্জায় সোনোরা স্মার্ট নামে ওয়াশিংটনবাসী এক নারী মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে। কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে তিনি অবাক হন। তাই বাবা দিবস পালনের আবেদন জানিয়ে তিনি স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।  সোনোরা স্মার্টও নিজের বাবার জন্মদিনের দিন (৫ জুন) বাবা দিবস পালন করার অনুমতি চান। তবে হাতে সময় কম ছিলো বলে ওই বছরের ১৯ জুন এ অঙ্গরাজ্যে প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়।

১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিনের তালিকায় তুলতে একটি বিল উপস্থাপন করা হয়। ১৯১৬ সালে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিলটি অনুমোদন করেন। সাত বছর পর, ১৯২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০তম প্রেসিডেন্ট কেলভিন ক্যুলিজ বাবা দিবসকে জাতীয় দিবসের মর্যাদা দেন।

১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জুনের তৃতীয় রোববার’ বাবা দিবস ঘোষণা করেন। সেই সময় থেকেই বিশ্বের সব বাবাদের সম্মানে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে বাবা দিবস।

পৃথিবীর সব দেশ একই দিনে বাবা দিবস পালন করে না। কিছু দেশ ভিন্ন মাসের কয়েকটি ভিন্ন তারিখে বাবা দিবস পালন করে। কিন্তু পৃথিবীর একটি বড় অংশ যেমন- বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস, হংকং, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়েসহ আরও কিছু দেশে জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করা হয়।

উইমেননিউজ২৪.কম-এর পক্ষ থেকে সকল জীবিত-মৃত বাবার জন্য রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।  


প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২১ রবিবার

শেয়ার করুনঃ