Wednesday,   22 January, 2025

সেই মীর জুমলার গেট!

Published: 21:43, 19 December 2024

Updated: 18:29, 6 January 2025

সেই মীর জুমলার গেট!

মীর জুমলার গেট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মোগল স্থাপনা `মীর জুমলার গেট` অযত্ন-অবহেলায় এখন ধ্বংসপ্রায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলায় এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে মোগল ইতিহাসের সাক্ষী এ গেটের একটি অংশের স্থাপনা। দীর্ঘদিনের অযত্নে খসে পড়েছে চুন-সুরকি। অবৈধ স্থাপনা আর অসংখ্য পোস্টারের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে গেটের স্থাপত্য সৌন্দর্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কার্জন হল ছাড়িয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমী যেতে চোখে পড়ে কয়েকটি স্তম্ভ। হলুদ রঙের এ স্তম্ভগুলো মূলত মীর জুমলার তোরণ। এ গেটের তিনটি অংশের একটি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের দিকে, মাঝখানের অংশ পড়েছে রোড ডিভাইডারের মাঝে এবং অপর অংশটি রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে তিন নেতার মাজারের পাশে।

তৎকালীন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডয়`স মূল শহরের সঙ্গে রেসকোর্সকে সংযুক্ত করার জন্য ময়দানের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি সড়ক তৈরি করেন। এই সড়কের প্রবেশপথে তৈরি করা হয় দুটি স্তম্ভ। অপর এক তথ্যে বলা হয়েছে, ইসলাম খাঁর আমলে রমনা অঞ্চলে ছিল `বাগে বাদশাহী` নামে মোগল উদ্যান। বাগে বাদশাহীর প্রবেশপথে ছিল দুটি স্তম্ভ। পরে তা পুনর্নির্মাণ করে নামকরণ করা হয় ময়মনসিংহ গেট।

মোগল আমলে বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করা হতো এ তোরণ। সেই সময় এর নাম ছিল `মীর জুমলার গেট`। পরে কখনও `ময়মনসিংহ গেট`, কখনও `ঢাকা গেট` এবং অনেক পরে নামকরণ করা হয় `রমনা গেট`। এ গেট রমনায় প্রবেশ করার জন্য ব্যবহার করা হতো বলে পরে সাধারণ মানুষের কাছে এটি রমনা গেট নামেই পরিচিতি পায়।

তবে ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশিত ঢাকার সংরক্ষিত স্থাপনার তালিকায় এ গেটের নাম থাকলেও গেটটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। ওই গেজেটে এ তোরণ এবং আশপাশের জায়গার নাম দেওয়া হয়েছে `মীর জুমলার গেট`। কিন্তু এ ধরনের কোনো নামফলক এলাকায় দেখা যায়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনা বর্তমানে নষ্ট হতে চলেছে। এরই মধ্যে গেটের একটি অংশ বেদখল হয়ে গেছে। সংশিল্গষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও অযত্নের কারণে সুরকি ও পলেস্তরা খসে পড়েছে। সেই সঙ্গে নষ্ট হয়েছে এর প্রাচীন স্থাপত্য সৌন্দর্যও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের পেছনের দিকে এ তোরণের পশ্চিম অংশ ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। তোরণের দেয়াল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে টিনের ঘর। ফলে ঢেকে গেছে তোরণটির অনেকাংশই। এ ঘরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের বেশ কয়েক মালী। ঘরের ভেতর দেয়াল ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে চুলা, খসে পড়েছে চুন-সুরকি। দেয়ালের অন্য পাশের অংশেরও একই অবস্থা।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে তিন নেতার মাজারের পাশে অবস্থিত স্তম্ভের অন্য অংশের অবস্থাও শোচনীয়। স্তম্ভের মাঝামাঝি অংশটি রোড ডিভাইডারের মধ্যে পড়ায় তাতে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির হাজারো পোস্টার। ফলে এর প্রকৃত সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে গেছে বির্বণ পোস্টারের আড়ালে।

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ঢাকার ইতিহাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন আক্ষেপ করে বলেন, `ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অবহেলা ও অযত্নের কারণে এ ধরনের মূল্যবান স্থাপনা আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। আমরা জাতি হিসেবেই নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সচেতন নই।`

সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, `বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।` কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন নির্দশন রক্ষায় কর্তৃপক্ষ বরাবর শিথিল ভূমিকা পালন করছে বলে মত দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।


আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ শনিবার

শেয়ার করুনঃ