
নীলকণ্ঠ পাখি
আশ্বিন মাসে নয়দিন ধরে চলা নবরাত্রির পর আসে বিজয়া দশমী। আজ সেই বিজয়া দশমী। মনে করা হয় এদিনই দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিলেন মহিষাসুর। কেউ কেউ আবার মনে করেন রাম-রাবণের যুদ্ধে এদিনই রাবণকে হত্যা করে রাম বিজয়লাভ করেছিলেন।
আদতে যে যে ঘটনাই মানুক না কেন এটুকু স্পষ্ট যে এদিন ভালোর হাতে খারাপের নিধন হয়েছিল। একই সঙ্গে উমা তার শ্বশুরবাড়ি ফিরে যান এদিন। ফলে সবটা মিলিয়েই যে এই দিনটি বিশেষ এবং তার একাধিক নিয়ম কানুন আছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
উৎসবপ্রেমী বাঙালি হিন্দু সমাজের সবচেয়ে বড় পার্বণ এই দুর্গাপূজা। আশ্বিন মাসে প্রায় দশ দিন ধরে দুর্গাপুজোর উৎসব পালিত হয়। দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমী হিসেবে পরিচিত।
চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে উমা কৈলাশ থেকে মর্তে বাপের বাড়ি এসে দিন পাঁচেক থেকে ফিরে যান শ্বশুরবাড়ি। আর ঘরের মেয়েকে আদরে যত্নে ভরিয়ে, জাকজমকপূর্ণ ভাবে সেই উদযাপন করেন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা বিশ্বের বাঙালি হিন্দুরা।
দুর্গাপূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা রীতিনীতি। সেরকমই একটি পরিচিত রীতি হল বিজয়া দশমীর দিন নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো। এই রীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন কাহিনি। এ পাখির পোশাকি নাম ‘ইন্ডিয়ান রোলার’, আর আদুরে নাম নীলকন্ঠ। বিশেষ এই পাখির সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার আবেগ দুর্গাপূজা।
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার
পুরাণ মতে, রাবণকে বধ করার আগে, নীলকণ্ঠ পাখির দর্শন লাভ করেছিলেন রাম। সেজন্যে এই পাখিকে শুভ বলে মনে করা হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন দশমীর দিন নীলকণ্ঠ দেখলে, পাপ মুক্ত হওয়া যায় এবং ইচ্ছাপূরণ হয়। অপর দিকে শিবের আরেক নাম নীলকন্ঠ। সমুদ্রমন্থনের সময় যে বিষ উঠে এসেছিল তা গ্রহণ করতে রাজি ছিল না অসুর-দেবতা কেউই। তখন সৃষ্টিকে রক্ষা করতে নিজের গলায় সেই বিষ ধারণ করেন স্বয়ং মহাদেব। সেই বিষের জ্বালায় নীল হয়ে ওঠে মহাদেবের গলা। সেই থেকেই তার নাম নীলকন্ঠ। আর নীল রঙ বলে এই নীলকণ্ঠ পাখি হয়ে ওঠে তার দূত।
নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়া নিয়ে আরও একটি মত প্রচলিত আছে। মহাদেবের দোসর মনে করা হয় এই নীলকণ্ঠ পাখিকে। হিন্দু ধর্মের প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, দশমীর দিন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের আগে নীলকণ্ঠ পাখি উড়ানো হয়। এই পাখিই কৈলাসে গিয়ে শিবকে আগাম বার্তা দেয় যে, উমা শ্বশুরবাড়ি ফিরছে।
পশ্চিমবঙ্গে একসময় বিসর্জনের সময় নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা থাকলেও আজ তা বন্ধ। আসলে এই প্রথার কারণে নির্বিচারে মারা পড়ত নীলকন্ঠ পাখি। তাই সরকার থেকেই আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয় নীলকন্ঠ পাখি ধরার চল। আজকাল নিয়ম রক্ষার স্বার্থে অনেকে কাঠের পাখি কিনে আনেন। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো রীতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
এশিয়ার বিস্তৃত অংশ, বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে মূলত নীলকণ্ঠ পাখির বাস। নীলকন্ঠ পাখি লম্বায় ২৬-২৭ সেন্টিমিটার। এই পাখির দেহ, লেজ ও ডানায় এক উজ্জ্বল নীল রঙের জৌলুস দেখা যায়। তবে বাংলাদেশ ও ভারতে এই পাখির যে বিশেষ প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায় তাদের গলার কাছের অংশটি হালকা বাদামি রঙের হয়।